Ticker

6/recent/ticker-posts

PRAJAPATI MOVIE (2022)

প্রজাপতি 
পরিচালক : অভিজীত সেন 
প্রযোজক : বেঙ্গল টকিজ 

ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় মিঠুন চক্রবর্তী ,দেব, মমতা শঙ্কর,স্বেতা ভট্টাচার্য্য, কৌশানি ব্যানার্জী, কনীনিকা ব্যানার্জী, অম্বরীশ ভট্টাচার্য্য প্রমুখ। 
ছবি : ইনস্টাগ্রাম (দেব)

ছবির গল্প একজন বাবা ও ছেলেকে ঘিরে।  জয় (দেব) একজন ওয়েডিং প্ল্যানার যে এই মুহূর্তে বিয়ে করতে একদম রাজি নয় কিন্তু তার বাবা গৌড় (মিঠুন চক্রবর্তী ) চায় তার ছেলের অবশ্যই এখন বিয়ে করা দরকার।  কারণ গৌড় একজন অবসরপ্রাপ্ত বিপত্নীক ব্যক্তি, তার ছেলে বিয়ে করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সংসার করলে এই ভরা সংসারই তার একাকিত্বের একমাত্র ওষুধ হতে পারে বলে মনে করে।  সে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে ছেলেকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে, ছেলে রাজি হয় না তবে সে তার সহকর্মী মালা(শ্বেতা ভট্টাচার্য্য) র  প্রতি একটা ভালো লাগা অনুভব করে । অন্যদিকে হঠাৎই দক্ষিনেশ্বর কালী বাড়িতে গৌড়ের সাথে দেখা হয় তার কলেজের বান্ধবী কুসুম (মমতা শঙ্কর) ও তার মেয়ের (কৌশানি ) সাথে এবং সে চায় কুসুমের মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে, বেনারসের গঙ্গায় গিয়ে ডুবও দেন বাবা ছেলে। কিন্তু এই ছেলের বিয়ের চেষ্টা করতে করতে গৌড়ের একসময় মনে হয় এই একাকিত্বে ভরা বাকি জীবনটা সে যদি কুসুমের সাথে কাটিয়ে দেয় কারণ স্বামীর মৃত্যুর পর কুসুমও একা মেয়ে বছরের পুরোটাই প্রায় বিদেশে থাকে। আর এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তাকে মুখোমুখি হতে হয় সমাজের বাঁকা চোখের কারণ সমাজ কি বলবে এই প্রশ্নই যে সব চেয়ে বেশি ভাবায়, দিনের শেষে এই সমাজেই যে থাকতে হবে সকলকে। জয় এই সম্পর্ককে প্রথমে না মানলেও ছোট থেকে মায়ের অভাব তাকে শেষে এই সম্পর্কে হ্যাঁ বলিয়ে নেয়। 
ছবি : ইনস্টাগ্রাম (দেব)

ছবির গল্প অনেকাংশেই বাস্তব সম্মত এবং পরিচালক একটা সাধারণ পারিবারিক গল্পকে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের সাথে খুব ভালো ভাবেই পরিবেশন করেছেন।  গল্পের শুরুতে দেবকেই নায়ক হিসেবে ভুল হতে পারে কিন্তু ছবির নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীই এবং নায়িকা মমতা শঙ্কর।  ১৯৭৬ এ মৃগয়ার পর আবার মিঠুন ও মমতা শঙ্কর জুটি বাঁধলেন এই ছবিতে। মা হারানো ছেলে ও বাবার সংসার তাদের , হাসি, কান্না , অভিমান সব কিছুর সাথে দর্শককে একাত্ব অনুভব করায় এই ছবি।  বৃদ্ধ বয়সে বিপত্নীক একজন ব্যক্তির পক্ষে একা জীবন কাটানো যে কত কঠিন তা এই ছবিতে খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এই ছবির আরো এক ইতিবাচক দিক বেনারস সহ বিভিন্ন মন্দিরের দৃশ্য, সাধারণ বাঙালি পরিবারের আস্তিকতা যা বাংলা ছবিতে বহুদিন দেখা যায়নি। সাথে কৌতুক দৃশ্য গুলিও যথেষ্ট হাসির উদ্রেক করে।

  ছবির গান গুলিও ভালো লাগে বিশেষ করে  অনুপম রায়ের ' তুমি আমার হিরো' এবং সুরজিৎ এর ব্যোম ভোলে গান দুটি। মোট চারটি গান এই ছবিতে আছে এবং চারটি গণি সুন্দর। 

মিঠুন চক্রবর্তী  ৭৪ বছর বয়সে একজন বাবার ভূমিকায় তার জীবনের অন্যতম সেরা অভিনয়টি করলেন। মমতা শঙ্কর তার জায়গায় তার সেরা অভিনয় করেছেন। দেব তার বাণিজ্যিক ছবির হিরোর ইমেজ থেকে বেরিয়ে এসে চরিত্রাভিনেতা হিসেবে নিজেকে ক্রমশ পরিণত করছেন এই ছবি তার সেরা উদাহরন। ছবির আরো একটি পাওনা হলো খরাজ মুখার্জীর কৌতুক দৃশ্যগুলি যেগুলি ছাড়া এই ছবি অসম্পূর্ণ। টেলিভিশন জগতের পরিচিত মুখ শ্বেতা ভট্টাচার্য র  প্রথম ছবি এটি এবং প্রথম ছবিতেই দেব এর বিপরীতে যথেষ্ট সফল।  দেব এর দিদি জামাইবাবুর ভূমিকায় কনীনিকা ব্যানার্জী ও অম্বরীশ ভট্টাচার্যর অভিনয় যথেষ্ট ভালো। 

ছবির প্ৰথমার্ধ যথেষ্ট উপভোগ্য ও হাসি, মজায় উৎসাহপূর্ণ হলেও দ্বিতীয়ার্ধে অনেক কিছু বিষয়কে একসাথে মেলাতে গিয়ে কোথাও হয়তো দিকভ্রষ্ট মনে হয়েছে।  তবে শেষের দিকে বিয়ে বাড়ির দৃশ্যে প্রতিবেশীদের কটূক্তির জবাবে জয়ে (দেব )র রুখে দাঁড়ানো ও একদম শেষে দেব ও মমতা শঙ্কর এর কথোপকথন আমাদের আবেগপ্রবণ করে তোলে যা ছবির অন্য খামতি গুলো ঢেকে দেয় অনেকটাই। শ্বেতা ভট্টাচার্য র মালা চরিত্রটির স্ক্রিনে আরো একটু বেশি সময় পাওয়া উচিত ছিল বলে মনে হয় , দেব ও শ্বেতাকে একসাথে সেভাবে দেখা যায়নি।  দেব এর দিদির চরিত্রে কনীনিকা ব্যানার্জীর চরিত্রটিকেও আরো একটু বিস্তারিত দেখানো গেলে ভালো হত এবং শেষে একটা 'Happy Ending হলেও মন্দ হত না। 

তবে সব মিলিয়ে এটি সপরিবারে দেখার মতো একটি সুন্দর ছবি যা ছুটির মরশুমে দর্শককে কোনোভাবেই নিরাশ করে না। 

রেটিং : ৮.৫/১০  


   

Post a Comment

0 Comments